Notification texts go here Contact Us Buy Now!


 

Posts

ট্রাকের পণ্যও যত কমছে, লাইন যত ছোট হচ্ছে

৬৫ বছর বয়সী আবেদা বেগম লাইনে দাঁড়িয়ে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। তাঁর সামনের লাইন যত ছোট হচ্ছে, ট্রাকের পণ্যের পরিমাণও তত কমছে। ডিম, শাকসবজি সেই কখন শেষ হয়ে গেছে। এখন আছে আলু আর পেঁয়াজ। তা-ও যদি না পাওয়া যায়, তাহলে দেড়-দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়ানোটাই বৃথা যাবে। ঘরে রেখে এসেছেন অসুস্থ স্বামীকে। গতকাল বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের বেগম নূরজাহান মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে কৃষিপণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে আবেদা বেগমের সঙ্গে কথা হলো।

তিনি বললেন, ‘বুড়া মানুষ। ঘরে অসুখওয়ালা মানুষটারে রাইখ্যা আসছি। আশা কইরা আসছি। কেউ লাইন ছাড়তে চায় না। আইজকা কিছু পামু কি না জানি না।’সম্প্রতি সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রথমবারের মতো শুরু করেছে ওএমএস বা খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রম। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন নারীর সহায়তায় আবেদা বেগম লাইন ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। পাঁচ কেজি আলু আর দুই কেজি পেঁয়াজের ভারে হাতের রেখাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠলেও আবেদা বেগমের মুখে তখন বিজয়ীর হাসি। তাঁকে সুযোগ করে দেওয়া অন্য নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। 

তখন ঘড়িতে বাজে ১১টা ৪৫ মিনিট। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে আবেদা বেগম আগে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো অন্য কয়েকজন নারী বিরক্তও হলেন। স্কুল ছুটির পর ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ট্রাকের কাছে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক মা। তবে শেষ রক্ষা হলো না। তাঁর সামনে তখনো বেশ কয়েকজন নারী। এর মধ্যেই ঘোষণা এল, ট্রাকে আর কোনো পণ্য নেই। আছে শুধু কয়েকটি ভাঙা ডিম। অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই বললেন, ‘আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের এমনিতেই লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা লাগে। আজ দাঁড়িয়ে লাভ হলো না। দেখি কাল আবার আসতে পারি কি না।’ 

ট্রাকের সামনে দুটি লাইন। একটি পুরুষ আর অন্যটি নারীদের জন্য। নারীদের লাইনটি তুলনামূলক লম্বা। তাঁরা জানালেন, কেউ কেউ সকাল ৬ বা ৭টা থেকে এসে লাইনে দাঁড়ান। ট্রাক আসে সকাল আটটার দিকে। তবে ট্রাক আসার পর একটা হুলুস্থুল লাগে। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন নারীর সহায়তায় আবেদা বেগম লাইন ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। পাঁচ কেজি আলু আর দুই কেজি পেঁয়াজের ভারে হাতের রেখাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠলেও আবেদা বেগমের মুখে তখন বিজয়ীর হাসি। তাঁকে সুযোগ করে দেওয়া অন্য নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন। 

গতকাল এখানে ট্রাক থেকে ভোক্তারা এক ডজন ডিম ১৩০ টাকা, ১ কেজি আলু ৩০ টাকা, ১ কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, ১ কেজি পেঁপে ২০ টাকা, ১ কেজি বেগুন ৫০ টাকা, ১ কেজি কচুর মুখি ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ টাকা, ১ কেজি পটোল ৩০ টাকা—এভাবে প্যাকেজে পণ্য কিনেছেন। পণ্য শেষ হতে থাকলে প্যাকেজের মূল্যও ৬০০ টাকা, ৫০০ টাকা এভাবে কমতে থাকে। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, একজন ভোক্তা পাঁচ কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ এবং এক ডজন ডিমের বেশি কোনোভাবেই নিতে পারবেন না। গতকাল ট্রাকের পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর সুব্রত দাস। 

তিনি জানালেন, আজ শুক্রবার আদাবরের অন্য জায়গায় পণ্য বিক্রি করবেন, যাতে একই ব্যক্তি প্রতিদিন পণ্য কেনার সুযোগ না পান। গতকাল ১২২ জন পুরুষ এবং ১৩০ জন নারী আঙুলের ছাপ দিয়ে পণ্য কিনেছেন। ট্রাকের পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে বলেও জানালেন সুব্রত। সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যেই ১ হাজার ৫০০ কেজি আলু, ৪৮০ কেজি পেঁয়াজ, ১ হাজার ৬২০টি ডিম, ১১০ কেজি পেঁপে, ২০০ কেজি পটোল, ৩০ কেজি কচুর মুখি এবং ৪০ পিস লাউ বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.